ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনালের রায়ে এক দুলাভাইকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। ৪৯/২০২১ মামলার রায়ে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোড় উজানপাড়ার আওরঙ্গজেব-এর ছেলে মোঃ মাসুদুর রহমান মাসুদকে (৪০) এ দণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়। বিজ্ঞ বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাঃ বজলুর রহমান মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) এ রায় প্রদান করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত মাসুদ রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ০৪-০৪-২০২১ তারিখ ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার শেষে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আসামীকে দণ্ড প্রদান করা এটি একটি অন্যতম রায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মাসুদকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। কার্যবিধির ৩৫(এ) ধারা অনুযায়ী আসামীর হাজতবাস সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুরের মোছাঃ জেসমিন খাতুন দণ্ডপ্রাপ্ত মাসুদুর রহমান মাসুদের সম্পর্কে শ্যালিকা ছিলেন। জামালপুর আশেক মাহমুদ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জেসমিন প্রায়ই তার দুলাভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যেতেন। অন্যদিনের মতো জেসমিন বিগত ১৬-১২-২০১৩ তারিখ সকাল ১০ টায় মাসুদের বাড়ি যান। বোন সুলতানা পারভীন এ সময় বাড়িতে ছিলেন না। মাসুদ বলেন, সে বাজারে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। মাসুদ দুপুরে জেসমিনকে কু-প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করেন। পরে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জেসমিনকে ধর্ষণ করা হয়। মাসুদ এ সময় কৌশলে ভিডিও ধারণ করে রাখেন।
পারিবারিক সম্মতিতে ২৪-০১-২০১৪ তারিখে চন্দ্রাবাজের জনৈক রঞ্জুর সাথে জেসমিনের বিয়ে হয়। মাসুদ ক্ষিপ্ত হয়ে জেসমিনকে আবারও কু-প্রস্তাব দেন। নানান ধরণের হুমকি দেওয়ার পরও জেসমিন রাজি না হওয়ায় মোবাইলে থাকা ভিডিওটি ১০-০৪-২০১৫ তারিখে পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়দের দেখিয়ে জেসমিনের ভাইয়ের মোবাইলে পাঠিয়ে দেন। রঞ্জু চারদিনের মাথায় ১৪-০৪-২০১৫ তারিখে জেসমিনকে ডিভোর্স দেন। গোপনে ভিডিও ধারণ এবং প্রচারের ঘটনায় জেসমিন বকশীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ মাসুদকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়। মামলাটি দীর্ঘ কয়েক বছর বিচারাধীন ছিলো। ময়মনসিংহে সাইবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বিচারের জন্য মামলাটি প্রেরণ করা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে শুনানি শেষে গত মঙ্গলবার মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। রাষ্ট্র পক্ষে এপিপি মশিউর রহমান ফারুক এবং আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট মোঃ জহিরুল ইসলাম (পলাশ) মামলাটি পরিচালনা করেন।
ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর ও জামালপুর জেলার মানুষ আইনী সহায়তা পেয়ে থাকেন। এর আগে এই ৪ জেলার মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে দূর্বিষহ দূর্ভোগের মধ্য দিয়ে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে গিয়ে আইনী সহায়তা নিতেন। বিশ্লেষকদের মতে, মামলার বাদী, বিবাদী এবং সাক্ষীরা ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে শতভাগ আইনী সুবিধা পাচ্ছেন। ট্রাইব্যুনালে মামলার চার্জশিট গ্রহণের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হচ্ছে। মামলা জট শূন্যের কোটায়। সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ জানান, মঙ্গলবার ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক প্রদত্ত রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে মানুষকে আরও সচেতন করবে। সাইবার ক্রাইম কমাতে হলে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।