শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩২ অপরাহ্ন
Bengali Bengali English English
সদ্য পাওয়া :
সাংবাদিক নাদিম হত্যা: ইউপি চেয়ারম্যান বাবুর রিমান্ড মঞ্জুর বকশীগঞ্জে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা খারিজ বকশীগঞ্জে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কলেজ অধ্যক্ষকে স্বাগত বকশীগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে রাস্তা কার্পেটিং কাজের উদ্বোধন বকশীগঞ্জে স্কুল থেকে ফেরার পথে তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী ধর্ষনের শিকার টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন জামালপুর জেলা শাখার নতুন কমিটি গঠিত বকশীগঞ্জে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা দেওয়ানগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বকশীগঞ্জে পুলিশের অভিযানে বিএনপির ৯ নেতাকর্মী আটক বকশীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্ত্রীর যৌতুকের মামলা

বকশীগঞ্জের সিংহ পুরুষ জমিদার নান্না মিয়া

Reporter Name
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯
  • ৫১৯৩ জন সংবাদটি পড়ছেন

বিশেষ প্রতিনিধিঃ জামালপুরের কৃতিসন্তান, ১৯৩০ ও ১৯৩৭ সালে পরপর দুই বার অবিভক্ত ব্রিটিশ বাংলার সাবেক আইন পরিষদের সদস্য মরহুম আজিজুর রহমান নান্না মিয়াঃ

অবিভক্ত বাংলার সাবেক আইন পরিষদের সদস্য MP মরহুম আজিজুর রহমান নান্না মিয়া বর্তমান জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষিয়া ইউনিয়ন সদরে তৎকালীন পাতিলাদহ পরগনার সম্ভান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে ১৮৯৮ জন্মগ্রহন করেন।

জামালপুর মহকুমা থেকে তিনিই ছিলেন প্রথম নির্বাচিত বঙ্গিও আইন সভা সদস্য। MLC (member of legislative Councils)

তার পিতার নাম মরহুম মঈন উদ্দিন শেখ ও মাতার নাম মরহুমা রুপজাহান বেগম।
দাদার নাম শেখ মোহাম্মদ জয়নুল আবিদিন ও দাদির নাম জয়গুন বেগম।

★শিক্ষা ও কর্মজীবনঃ
মরহুম আজিজুর রহমান (নান্না মিয়া) জমিদারি পরিবারিক পাঠশালায় শিক্ষা গ্রহন শেষে তৎকালীন সিরাজগঞ্জ বি.এল বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী এবং ময়মনসিংহ শহরস্থ মৃতুঞ্জয়ী ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণী (প্রবেশিকা পাশ ১৯১৯) পর্যন্ত পড়াশুনা শেষে পিতার জমিদারি দেখাশুনার পাশাপাশি সমাজসেবা ও রাজনৈতিক অঙ্গনে জড়িয়ে পড়েন।
পরে, ১৯২৩ সনে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রেসিডেন্সসি কলেজে ভর্তি হলেও আর পড়ালেখা করেন নাই।

পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমাজ সেবামুলক কাজে যথেষ্ট ভুমিকা রাখতে সক্ষম হন।

যার প্রেক্ষিতে পরবর্তি সময়ে ১৯৩০ ও ১৯৩৭ সালে পরপর দুই বার অবিভক্ত ব্রিটিশ বাংলার আইন পরিষদ সদস্য এম.এল.সি (সংসদ সদস্য) MP নির্বাচিত হয়েছিলেন, অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রি শেরেবাংলা এ.কে ফজলুল হকের দল কৃষক-প্রজা পার্টি থেকে।
এখানে উল্লেখ যে ব্রিটিশ আমলে বর্তমান জামালপুর, শেরপুর ও টাংগাইল জেলার আংশিক নিয়ে একটি (M.L.C) Member of Legislative Councils আসন ছিল।

পরবর্তি তে পাকিস্তান আমলেও শেরেবাংলার এ.কে ফজলুল হকের রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্ট থেকে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আবারো প্রার্থী করা হয়।কিন্তু তিনি শারিরীকভাবে অসুস্থতার কারনে তার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা সম্ভব হয়নি।

এবং যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে তাকে টেকনোকেট কোটায় কৃষি মন্ত্রি হওয়ার জন্য আমন্ত্রন পায়। কিন্তু তখন তার শারীরিক অসুস্থতা এতটাই বেশি ছিলো যে, তারপক্ষ আর মন্ত্রি দায়ীত গ্রহনকরা সম্ভব হয়নি।

ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন সৎ ন্যায়পরায়ণ এবং সমাজ সচেতন রাজনীতিবিদ।

নিজে জমিদার হয়েও, তৎকালীন ব্রিটিশ ইষ্ট-ইন্ডিআ কোম্পানির শোষণ নীলকর ও জমিদারদের কর্তৃক নির্যাতিত মানুষের পক্ষে তিনি ছিলেন এক প্রতিবাদি কন্ঠস্বর।

প্রজাসত্ব আইন (Bengal Tenancy) সংস্কার করে প্রজাদের দঃখ কষ্ট লাঘবের দাবি জানিয়ে ছিলেন ব্রিটিশ সংসদের কাছে।

কলকাতা, দিল্লি, ও ঢাকায় তৎকালিন সময়ে অনেক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও সমাজ সংস্কার, সভা, মযলিসে, বৈঠকের আমন্ত্রিত অথিতি ছিলেন।
এছারা ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশণ এবং ঐতিহাসিক কাগমারী সন্মেলনে আমন্ত্রিত অথিতি ছিলেন।

তৎকালিন সময়ে, নুরুল-আমিন, আব্দুল মোনেম খান, ঢাকার নবাব খাজা নাজিমউদ্দিন, হোসেন সহিদ সরোয়ার্দী, সেরেবাংলা এ.কে ফজলুল হক সহ অনেকের সাথে ছিল তার ঘনিষ্টোত্বা ও বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক।

তৎকালিন সময়ে নান্না মিয়া এতোটাই জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন যে, ঐ সময়কার অত্র অন্চলের কবি-সাহিত্যিক-লেখক পুস্তক (বই) রচনা করেছের তাকে উৎসর্গ করে।
উদাহরন সরুপ বলা যায়, তৎকালিন সময়ে জনপ্রিয় লেখক শেখ আলেক উদ্দিন বাড়ি নান্দিনা জামালপুর তার রচিত পল্লি সুহ্দ (১৯৩৩) এবং রামনাথ বিদ্যা ভূষনের (শেরপুর) রচিত ময়মনসিংহ সাহিত্য(১৯৩৮) বই গুলো নান্না মিয়াকে উৎসর্গ করে লেখা।

MLC নান্না মিয়া তৎকালিন ময়মনসিংহ জেলা কাওনসিলের আজীবন সদস্য ছিলেন।

জামালপুর আশেক মাহামুদ কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন নগদ আর্থর সাহায্য করেছিলেন এবং কলেজর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

জামালপুর শিল্পকলা একাডেমি তাহারই দান করা জমি ও ভবনের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে ছিল।

ঢাকায় নবাবগঞ্জ এতিমখানা ও মাদ্রসা প্রতিষ্টার সময় নগদ অর্থ সহায়তা করেছিলেন।

তৎকালিন জামালপুর মহকুমা প্রশাষকের (SDO) ভবন তার দান করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৩০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তৎকালিন ময়মনসিংহ জেলা ইউনিয়ন বোর্ড এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

এছাড়াও তৎকালিন ময়মনসিংহ জেলা পৌর ভবনের জমি দাতা তিনি।

এছাড়া নিজ গ্রাম ও অত্র এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নেও রয়েছে তার উল্লেখ্যযোগ্য ভুমিকা।

তৎকালীন সময়ে নিলক্ষিয়া বাজার, ডাকঘর, মসজিদ, দাতব্য চিকিৎসালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন বোর্ড, খাদ্য গুদাম, কবরখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তারই দান করা জমি ও একান্ত প্রচেষ্ঠাই।

তিনি ও তার ভাই তৎকালীন অনারেরী ম্যাজিস্ট্রেট মরহুম মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দারের অক্লান্ত প্রচেষ্ঠায় ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিলক্ষিয়া রুপজাহান উচ্চ বিদ্যালয়।

এটিই ছিল তৎকালিন সময়ে অত্র এলাকার বর্তমান বকশীগঞ্জ ও শ্রিরবরর্দী উপজেলার মধ্য প্রথম হাই স্কুল।

পরবর্তিতে সময়ে সরকারি মর্যদা-সন্মান স্বরুপ বিদ্যালয়টি পাইলট উপাধী লাভ করে বিদ্যালয়টি।

যা আজকের গোটা বকশিগন্জ উপজেলার একমাত্র পাইলট বিদ্যালয় হিসাবে সমধিক পরিচিতি লাভ করে।

ব্যক্তিজীবনে জীবনে তিনি ছিলেন বিবাহিত তার স্ত্রী সিরাজুন নেসা ছিলেন রংপুরের রসুলপুর পরগনার জমিদার মনোয়ার হোসেন খান চৌধুরীর কন্যা।

MLC নান্না মিয়া ছিলেন ৪ কন্যা ও ২ পুএের জনক। সন্তানদের পরিচিতিঃ
★১ম কন্যা কার্নিজ ফাতেমা, স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসান উদ্দিন চৌধুরী।
★২য় কন্যা আনিস ফাতেমা, স্বামী মরহুম আঃ আজিজ চৌধুরি।
★৩য় কন্যা রৌশন আরা, স্বামী মরহুম মকবুলুর রহমান চৌধুরি।
★৪র্থ কন্যা দিলারা বেগম, স্বামী মরহুম ফখরোজ্জামান
এবং দুই পুত্র
১, মজিবুর রহমান (গেন্দা মিয়া)।
২, হাফিজুর রহমান (সাজু মিয়া)।

ব্রিটিশ ভারতের আবিভক্ত বাংলার আইন সভা M.L.C সদস্য আজিজুর রহমান (নান্না মিয়া) ১৯৬০ সালে ২৩ অগাস্ট মাত্র ৬২ বছর বয়সে মৃত্যু বরন করে।

তথ্য ও সুত্রঃ আলোকিত জামালপুর।

পছন্দ হলে শেয়ার করুন

এ ধরনের আরও সংবাদ
সাপ্তাহিক বকশীগঞ্জ
        Develop By CodeXive Software Inc.
HelloBangladesh