রোকনুজ্জামান সবুজঃ জামালপুরের মেলান্দহ তেলীপাড়া গ্রামের প্রতারণার আশ্রয়ে ৩ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে আরেক বিয়ে করলেন ইউপি সচিব মিজানুর রহমান (৩২)। তার পিতার নাম শামসুদ্দিনের ছেলে। মিজান বর্তমানে ইসলামপুরের কুলকান্দি ইউপি’র সচিব হিসেবে কর্মরত। জানাগেছে, মিজানুর রহমান ৩০ মে/১৭ ঝাউগড়া গ্রামের আলতাফুর রহমানের কলেজ পড়–য়া মেয়ে আরিফা আক্তার (১৯)কে বিয়ে করেন কাবিন ছাড়া।
কারণ টিকা কার্ডে আরিফার প্রকৃত জন্ম তারিখ ৫ মার্চ/১৯৯৫। এসএসসি পাশের সনদে জন্মতারিখ ১ ফেব্রুয়ারী/২০০১। বিয়ে রেজিস্ট্রিতে কোন জন্ম তারিখ ধরা হবে? এ নিয়ে বর-কনের পক্ষের লোকেরা দ্ধিধাদ্বন্ধে পড়েন। উভয় পক্ষের সম্মতিতে কনের এসএসসি’র সনদ অনুসরণ করায় কনের বয়স কম থাকে। ফলে মুন্সী দিয়েই বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ের পর মিজানুর রহমান স্ত্রী আরিফা জামালপুর শহরের ফুলবাড়িয়া ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন সৈয়দ আলীর ভাড়াটে বাসায় অবস্থান করেন। একদিন ৫লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আরিফাকে পিত্রালয়ে পাড়িয়ে দেয়। আরিফার পিতা ২লাখ টাকা গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মিজানকে দিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রির বলেন। এসময় মিজান ও তার পিতা একসপ্তাহ পর রেজিস্ট্রি করে আরিফাকে গ্রামের বাড়িতে নেয়ার প্রস্তাব দিলে মেয়ের পক্ষ সাদরে গ্রহণ করেন। কিন্ত এক সপ্তাহ পর মিজান আরিফাকে বিয়ের কথাই অস্বীকার করলে চারদিকে হইচই পড়ে যায়। এ খবরে নববধু আরিফার কান্নাকাটিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
হতাশাগ্রস্থ্য পরিবার বিষয়টি উভয় পক্ষের ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার-ইউপি সচিব সমিতিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে ধর্না দেয়। মিজানের কর্মস্থল কুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যানের কাছেও বিচার না পেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক খন্দকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ৭ মে উভয় পক্ষকে ডাকেন। উভয়পক্ষের শুনানীতে বিয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। শুনানীতে বিয়েতে উভয় পক্ষের উপস্থিত ৩১ সাক্ষীর স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। এই ঘটনার পরের সপ্তাহে মিজানুর রহমান গত ১৩ এপ্রিল/১৮ ঝাউগড়ার টুপকারচর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের কলেজ পড়–য়া মেয়ে জাহিদা বেগম (১৯)কে রেজিস্ট্রি মূলে বিয়ে করে। আগের বিয়ের তথ্যগোপন রেখে প্রতারণার আশ্রয়ে ৩লাখ টাকা যৌতুকও নিয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রীর পিতা জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগ, কুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় আমরা প্রতারিত হয়েছি। তিনিই বরের অভিভাবক ও বিয়ের সাক্ষী। কৌশলে বিয়ের দেনমোহরও ধার্য্য করেছে ৩লাখ ১ টাকা। গ্রামের সাধারণ কৃষক পরিবারের সাথে শিক্ষিত-সচেতনরা এমন প্রতারণা করবে কে জানে? কুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সনেটের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আগের স্ত্রী থাকাবস্থায় কিভাবে তাঁর সচিব মিজানুর রহমানকে দ্বিতীয় বিয়ে করালেন? এমন প্রশ্নে তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন-আগের স্ত্রী আমার কাছে বিচার দিলেও পরে আসে নাই। প্রথম স্ত্রী আরিফা আক্তার ও তার পরিবারবর্গ জানান-চেয়ারম্যানের কাছে মিজান প্রতারণার আশ্রয়ে বিয়ে অস্বীকার করলেও পরে নিশ্চিত করেছেন। তিনি এলাকায় কম থাকেন। এজন্য আমরা ঢাকায় তাঁর সাথে দেখা করে বিয়েতে বর-কনের ছবিও দিয়ে আসছি। চেয়ারম্যান তাঁর সচিব হবার কারণে কোন ব্যবস্থা নেন নাই। মিজানের মামা হবিবুর রহমান মেম্বার ও গ্রামবাসিরা বলেন-মিজান বিয়ে অস্বীকার করায় কয়েকদফা সালিশের একপর্যায়ে যৌতুকের ২ লাখ টাকা ফেরত দেয়। পিতা শামসুদ্দিন মিজান-আরিফার বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু ২ লাখ টাকা আরিফাকে কেন দিলেন? এমন প্রশ্নের বিষেয়র কথা স্বীকার করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে মিজান গা-ঢাকা দিয়েছেন। নিকট আত্মীয় ছাড়া কারোর ফোনও রিসিভ করছেন না।
মিজান বিয়ের পর স্ত্রী আরিফা আক্তারকে নিয়ে সৈয়দ আলীর বাসায় ভাড়া থাকতেন। বাসার মালিক সৈয়দ আলীর পরিবারবর্গ এবং আশপাশের দোকান্দাররা বলেছেন-স্বামী-স্ত্রী পরিচয়েই তাঁরা প্রাই দুই মাস এখানে অবস্থান করেছেন। প্রথম স্ত্রী আরিফা আক্তার বলেন-সত্য নিয়ে আমি লড়ব। এজন্য এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের কাছে আইনী সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছেন।