বিশেষ প্রতিনিধিঃ জামালপুরের বকশীগঞ্জে বাট্টাজোড় ইউনিয়নের দত্তেরচর গ্রামের অর্নাস পাশ করা লাবলুর প্রচেষ্টায় চালু হয় একটি টার্কি খামার। খামার চালু হওয়ার সময়ে অনেকই পোল্ট্রেী ফার্ম মনে করলেও দিন দিন এলাকার মানুষের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে তার এই খামার দেখতে আসেন।
এই খামার স্থাপন করে হয়েছেন সামজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হয়েছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে টার্কি সম্পর্কে জানতে পারেন লাবলু। টার্কি সর্ম্পকে ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন টার্কি পালনের। তারপর টার্কি পালনের উপর কিছু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মাত্র ২০ হাজার বিনিয়োগে ১০টি টার্কি নিয়ে খামারটি শুরু করেন লাবলু।
প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা পুরণের ক্ষেত্রে পোল্ট্রির পাশাপাশি টার্কি মুরগি বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।
বর্তমানে টার্কি উৎপাদনে বিশেষভাবে অবদান রেখেছে লাবলু রয়েল টার্কি ফার্ম। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে মাত্র ১০টি টার্কি দিয়ে ফার্মটি শুরু করলেও বর্তমানে খামারে ৩-৪ মাস বয়সী ১০০টি এবং ৮-৯ মাস বয়সী ৩০টি টার্কি রয়েছে। একটি পুরুষ টার্কির ওজন হয় ১০-১২ কেজি। পুরুষ টার্কির তুলনায় স্ত্রী টার্কির আকৃতিতে ছোট এবং ওজনে কম হয়। একটি স্ত্রী টার্কি বছরে ৮০-১০০টি ডিম দেয়।
ইনকিউবেটরের মাধ্যমে টার্কির বাচ্চা উৎপাদন হয়। প্রতিমাসে এখানে ২০০-২৫০টি বাচ্চা উৎপাদন হয়। এছাড়া দেশি মুরগির সাহায্যে সনাতন পদ্ধতিতেও ২৮ দিনে বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। যদিও তিনি বাচ্চা ফুটানোর কাজটি পাশ্ববর্তী ইসলামপুর থেকে করে থাকেন।
এদের প্রধান খাবার হচ্ছে শাক সবজি। এছাড়া ৩০ভাগ দানাদার খাবার দেওয়া হয়।
শান্ত স্বভাবের এই টার্কি গুলো ৬ মাস বয়সে এটি খাবার উপযোগী হয়। সে সময় প্রতিটি টার্কির ওজন হয় ৫-৬ কেজি পরিমান।
টার্কির একমাস বয়সের একটি বাচ্চার দাম ৩ হাজার টাকা, বড় একজোড়া টার্কির দাম ৮-১০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়।
অনুকূল পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পরিবেশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘর ও নিয়মিত খাবার দিলে টার্কি রোগাক্রান্ত হয় না। একটি টার্কির জন্য ৪-৫ বর্গফুট জায়গা রাখতে হবে। চারটি ভ্যাকসিনেশন সিডিউল আছে। রানীক্ষেতসহ চারটি রোগের জন্য ভ্যাকসিন দিতে হয়।
টার্কির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি খাদ্য তালিকার একটি আদর্শ মাংস হতে পারে। পাশাপাশি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাংসের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যাদের অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া নিষেধ অথবা যারা নিজেরাই এড়িয়ে চলেন, কিংবা যারা গরু বা খাসীর মাংস খান না, টার্কি তাদের জন্য হতে পারে বিকল্প। তাছাড়া বিয়ে, বৌ-ভাত, জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাসীর বা গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে টার্কির মাংস হতে পারে অতি উৎকৃষ্ট একটি খাবার এবং গরু বা খাসীর তুলনায় খরচও হবে কম।
তবে মাংস হিসেবে বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠতে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে ছোট আকারের খামার করার যে চাহিদা দেশ ব্যাপী তৈরি হয়েছে,তাতে আগামী ৩/৪ বৎসরে কয়েক লাখ টার্কির প্রয়োজন হবে এবং সে ক্ষেত্রে দাম ও বেশী পাওয়া যাবে। বর্তমানে ৩০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বয়স ও রং ভেদে টার্কির জোড়া কেনা বেচা চলছে।
লাবলু জানান, টার্কি ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। পরিশ্রমও কম। ২০টার্কি দিয়ে ব্যবসা শুরু করলে যে কেউ লাভবান হবে। এই টার্কি ফার্ম সামলম্বী হওয়ার একটি উপায় বলে মনে করেন।
এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা এই টার্কি পালনের আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতি দেন লাবল।
উল্লেখ্য, টার্কি মুলত মেক্সিকো ও আমেরিকা অঞ্চলের বন্য প্রজাতির এক ধরনের পাখি। আমেরিকাতে ইউরোপীয় কলোনী স্থাপনের পুর্বে এই পাখিকে মেসোআমেরিকায় সর্বপ্রথম গৃহপালিত পাখি হিসেবে পালন শুরু করা হয়। এই বন্য পাখির বহু প্রজাতি মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চলে এখনো দেখ যায়। এটি এভিস শ্রেণীর অর্ন্তভুক্ত ফ্যাসিএনিডি পরিবারভূক্ত মিলিএগ্রিস গণের “গ্যালাপাভো ” প্রজাতির গৃহপালিত পাখি। টার্কি পাখির বাচ্চা দেখতে মুরগীর বাচ্চার মত হলেও পরিপূর্ণ বয়সে বদলে যায় আকৃতি ও চেহারা। টার্কি বাণিজ্যিক মাংস উৎপাদনের জন্য খুবই উপযুক্ত।
এরা দেখতে খুব সুন্দর হয়। তবে এরা বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত নয়। তারা দ্রুত বড় হয়ে যায় এবং ব্রয়লার মুরগির মত খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে উঠে। পুরুষ টার্কিকে ডাকা হয় ”টম” নামে এবং স্ত্রী টার্কিকে ডাকা হয় ”হেন” নামে।