অধ্যাপক মো: সুরুজ্জামান, যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জামালপুর জেলা শাখা।
‘মহান মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙ্গালী জাতির অহংকার।
সেই সব বাঙ্গালীদের কাছে এটি অহংকার, যাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতণায় বিশ্বাসী।
দেশে এখন দু’ধরনের বাঙ্গালী আছে। যার একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতণার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাঁরা এবং তাঁদের উত্তরসূরীরা।
আর একটি এই চেতণা বিদ্বেষী। এদের পরিচয় স্বাধীণতা বিরোধী।
স্বাধীণতা বিরোধী’ শব্দটার জন্ম হয়েছে স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে। ১৯৭১ এ যারা হানাদার বাহিনীর দালালী করেছে তারাই স্বাধীনতা বিরোধী।
ঐ সময় বেশ কয়েক ধরণের স্বাধীণতা বিরোধী ছিল। এরা বিভিন্ন রকমে হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা দিয়েছে। তার মধ্যে দালাল(শান্তি কমিটি),বদর বাহিনী, রাজাকার বাহিনী, আল শামস অন্যতম। শেষোক্ত তিন বাহিনী ছিল হানাদারদের স্বশস্ত্র সহযোগি। এরা অস্ত্র হাতে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এরা তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বেতনভুক্ত ছিল।
কিন্তু!! স্বাধীণতা বিরোধী দালালরা (শান্তি কমিটির সদস্য) ছিল সবচেয়ে নিকৃষ্টতম। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতণায় বিশ্বাসীদের হানাদারদের চিনিয়ে দিয়েছে, তাদের বাড়ীঘর লুট করেছে, জ্বালিয়ে দিয়েছে।। হানাদারদের মনোরঞ্জনের জন্য বাঙ্গালী নারীদের ধরে এনে হানাদারদের ক্যাম্পে সাপ্লাই দিয়েছে। নিজেরাও নারী ধর্ষণ করেছে। এদের রাজনৈতিক দর্শনই ছিল পেয়ারে পাকিস্তান।
এই সকল দালালদের অনেকেই আজ জীবিত নেই।
কিন্ত তাদের পরবর্তী প্রজন্মরা বিভিন্ন মোড়কে
ওদের বাপ-দাদার পেয়ারে পাকিস্তানী পতাকা হৃদয়ের গভীরে লালন করছে। সুযোগে এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতণা ধ্বংসের চক্রান্তে জড়িত হয় খুবই সুকৌশলে।
এই সকল দালালরা সারাদেশের গ্রামে- গঞ্জেই ছড়িয়ে ছিল। ছিল আমাদের জামালপুরেও। কিন্তু ক’জন কে চিনি আমরা?
এ প্রজন্মের মানুষরা এদের কে কমই চিনবে বৈকি।
কারণ এরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাঁদের অনেকেই এখনও জীবিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতণায় বিশ্বাসীদের অনেকেই এখনও সচল। তাঁদের দায়িত্ব এই সকল নর-পিচাশদের পরিচয় উন্মোচিত করার।
তা না হলে জাতি কোনদিনই জানতেই পারবে না,
৩০ লক্ষ শহীদদের রক্তে এ দেশের মাটি রঞ্জিত করার পিছনে কোন কোন দালাল জড়িত ছিল।
মুক্তিযোদ্ধারা কি পারেন না,এই সকল দালালদের একটা তালিকা করতে? পারেন নিশ্চয়!!কিন্তু করেন না।। কেন করেন না? প্রশ্নটা শুধু আমার না, আমার মতো অনেকেরই। এই বিষয়ে সরকারের উদ্দ্যোগই মূখ্য।
জানাগেছে, সরকারি একটি তৎপরতা নাকি চলমান আছে। তবে মাঝে মধ্যে সেটি নাকি হোচট খায়। খুড়িয়ে চলছে নাকি এ তৎপরতা। সরকারের এ উদ্দ্যোগে গতি না এলে, এই দালাল, রাজাকাররা অধরাই থেকে যাবে। ইতিহাসের এই কালো তালিকা ছাড়া সারাজীবন অসম্পন্ন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই জানবে এ জাতি। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্দ এই অংশটি লিখার দায়িত্ব সরকারের।
মুক্তিযুদ্ধের চেতণাধারী এ সরকারের মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, আপনার দায়িত্বের মধ্যে এটি পড়ে কি?
যদি পড়ে, তবে উদ্দ্যোগ আপনাকেই নিতে হবে।
নিবেন কি?
মহান স্বাধীনতার মাসের প্রথম প্রহরে আপনার কাছে জাতির প্রত্যাশা এটিই ।
জয়বাংলা।।
জয়বঙ্গবন্ধু।।