বকসীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় প্রাকৃতি সৌন্দর্য্যের এক অপরুপ লীলাভূমি। গারো পাহাড়ের এ অংশটুকুতে রয়েছে চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। ছোটখাট পাহাড়,শাল গজারীর গাছ,পাহাড়ের নিচে সবুজ প্রান্তর সব মিলিয়ে ভ্রমন বিলাসীদের আকর্ষণ করার জন্য সব উপাদান ছড়িয়ে আছে এই জায়গায়। বিশেষ করে রাজা পাহাড়ের দৃশ্য সত্যিই নজর কাড়ে।আমাদের গারো পাহাড়ও নজর কেড়েছে দেশের ভ্রমনবিলাসী দর্শনার্থীদের।
এবারের ঈদে ঘুরে আসতে পারেন লাউচাপড়া ও রাজার পাহাড় ।
আমরা নতুন কিছু দেখার, পাবার আশায় উন্মুখ চিরকাল। আর তা যদি হয় হাতের কাছে তবে সব কিছু ভূলে ছুটে যাবার তাগিদ মনকে তাড়া দেয়। এমনই এক জায়গার নাম গারো পাহাড়ের লাউচাপড়া ও রাজা পাহাড়। তাই এ পিকনিকের মৌসুমে প্রতিদিন শতশত বাস মাইক্রোতে মুখরিত হয়ে উঠে লাউচাপরা ও এর আশেপাশের এলাকা। অবস্থান: শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত ঘেষে জামালপুরের বকসীগঞ্জে লাউচাপড়ার অবস্থান। শ্রীবরদী থেকে ১২ কিলোমিটার ও বকসীগঞ্জ থেকে সমপরিমান উত্তরে বালিজুরি রেঞ্জের দু‘ উপজেলার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জুড়ে গারো পাহাড়। এর মধ্যে ৭ হাজার ৯৯ একর ৬২ শতাংশ বনভূমি বকসীগঞ্জ উপজেলার।
এছাড়া পাহাড়ি আদিবাসীদের কাছ থেকে ক্রয়কৃত ব্যক্তিমালিকানায় রয়েছে বেশকিছু বনভূমি। কিভাবে আসবেন: খুব বেশি দূরের পথ নয়। রাজধানী ঢাকার মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন ইন্টারসিটি গাড়িতে ময়মনসিংহ সড়ক পথে শেরপুর জেলা শহরে পৌছবেন। শেরপুর থেকে বাসে বা সিএনজিতে পিচঢালা পথে শ্রীবরদী। এর পর শ্রীবরদী থেকে সিএনজিতে কর্ণঝোড়ার আঁকাবাকা পাহাড়ি পথ পেড়িয়ে বকসীগঞ্জের লাউচাপরা ও শ্রীবরদীর রাজা পাহাড়। এছাড়া ঢাকা মহাখালি থেকে ছেড়ে আসা রিফাত, সিয়াম, প্রিয়, ও শ্রীবরদী বণিক সমিতির পরিবহনে সরাসরি শ্রীবরদী আসতে পারবেন। কিংবা শেরপুর দারোগা আলী পার্ক থেকে পাবেন মাইক্রো। কেন আসবেন: প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্যের মহিমায় উদ্ভাসিত একটি গ্রামীণ জনপথ শ্রীবরদী ও বকসীগঞ্জের গারো পাহাড়। পাথর আর বনরাজির অপূর্ব সম্মিলন আর্কষন করছে প্রকৃতি প্রেমি পর্যটন পিয়াসীদের। অসংখ্য পর্যটক শীতের কুহেলিকা আর পাখির গানের টানে এখানে এসে ভীড় জমায় প্রতি বছর।
আর তাই শীত মৌসুমে প্রতিদিন পযর্টকদের পদভারে সেই নিভৃত অঞ্চলটিও প্রাণ পায় মৌসুমী উৎসবের। এখানে ‘৯৬সালে জামালপুর জেলা পরিষদ ২৬ একর জায়গা জুরে গারো পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করেছে ‘ক্ষনিকা’ নামে পিকনিক স্পট। ক্ষনিকা পিকনিক স্পটে ১৫০ ফুট উচু পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হয়েছে ৬০ ফুট উচু সুরম্য টাওয়ার। প্রতিদিন শতাধিক কার, বাস, মাইক্রোবাসে আসা হাজার হাজার মানুষের কলরবে এই লাউচাপড়ার ক্ষনিকা পিকনিক স্পটটি হয়ে উঠে মুখরিত। কি দেখবেন: ছবির মতো সব কিছু । এখানে বন্ধু-বান্ধবের সাথে হৈ-হুল্লোর আর চেঁচামেচির মধ্য দিয়ে ভ্রমণের সময় এক ভিন্ন জগতের সন্ধান পাবেন।
যাত্রা পথে রাস্তার দু‘পাশে পড়বে অপূর্ব দৃশ্য। যত এগোবেন তত মনে হবে রাস্তা বুঝি পাহাড়ের গায়েই শেষ হয়ে গেছে। পাহাড়ের ওপারে কি আছে এমন একটা কৌতুহল মনে উঁকি দিতে পারে। ইচ্ছে হয় ওপারে কি আছে এক দৌড়ে দেখে আসি। গারো পাহাড়ের চূরায় দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালে চোখে পড়বে শুধু পাহাড় আর পাহাড়- যেন বুজ গালিচা মোড়ানো প্রকৃতি। পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে স্বচ্ছ পানির অজস্র ঝরনা ধারা। মনে হবে এসব দেখতে সপ্তাহখানেক কাটিয়ে দেই। নানা জাতির পাখির কলকাকলী।
কোথাও গহীন জঙ্গল। আবার কোথাও কোথাও দেখা যাবে ন্যাড়া পাহাড়। আরো দেখা যাবে ওপারে সীমানা কালো সূর্যোদয় ও সূযার্স্ত দর্শন। পায়ে হেটে চারদিকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে মনোরম পাহাড়ি পরিবেশ। পাহাড়ের বিরাট এলাকা জুড়ে রয়েছে আকাশ মনি, বেলজিয়াম, ইউক্যলিপটাস, রাবার, ওষুধী গাছ বাগান ও কড়ই ছাড়াও নানা জাতের লতাগুল্ম আর বাহারি গাছ গাছালিতে সৌন্দর্যমন্ডিত সবুজের সমারোহ। শ্রীবরদীর রাজা পাহাড়ের বিশাল মালভূমিও যে কোন পর্যটকের মনকে মূহুর্তে ভরিয়ে দিতে পারে। শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় প্রাকৃতি সৌন্দর্য্যের এক অপরুপ লীলাভূমি। গারো পাহাড়ের এ অংশটুকুতে রয়েছে চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। ছোটখাট পাহাড়,শাল গজারীর গাছ,পাহাড়ের নিচে সবুজ প্রান্তর সব মিলিয়ে ভ্রমন বিলাসীদের আকর্ষণ করার জন্য সব উপাদান ছড়িয়ে আছে এই জায়গায়। বিশেষ করে রাজা পাহাড়ের দৃশ্য সত্যিই নজর কাড়া।
জনশ্রুতি থেকে জানা গেছে,প্রাচীনকালে কোন এক গাড়ো রাজা এখানে বাস করতো। আর সে সময় থেকেই এই পাহাড়টি রাজার পাহাড় নামে পরিচিত। শেরপুর জেলার ভূখন্ড গারো পাহাড়ের যতটুকু অংশ পড়েছে তার মধ্যে রাজার পাহাড়ের উচ্চতাই সবচেয়ে বেশি। এই পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে শতাধিক হেক্টর সবুজে ছাওয়া সমতল ভূমি। এখানে উঠে এলে দূরের আকাশকেও কাছে মনে হয়। সবুজ ও হালকা নীলের নৈসর্গিক এই দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। শ্রীবরদী উপজেলা শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই রাজা পাহাড় । রাজা পাহাড়ের পার্শ্বেই রয়েছে আদিবাসী জনপদ বাবেলাকুনা। অনেক আগে থেকেই এই পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে এই গ্রামটি। বনের সবুজে মোড়া এই গ্রামটিও ভ্রমন পিপাসুদের আকৃষ্ট করতে পারে। গারো, হাজং,কোচ অধ্যুষিত আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্নমাত্রার সংস্কৃতি সমৃদ্ধ বৈচিত্র ময় জীবনধারা।
রয়েছে বন,পাহাড়,প্রাকৃতি বিরূপতা এবং পাহাড়ী জন্তুদের সাথে মিলে জীবন সংগ্রামের এক ভিন্ন চিত্র। রয়েছে রাবার বাগান। এখানকার দর্শনীয় প্রকৃতি, আদিবাসীদের জীবনাচরণ ও সংস্কৃতি পর্যটকদের বারবার এখানে আকর্ষন করবে। আদিবাসীদের সংস্কৃতি ধরে রাখতে এবং চর্চার কেন্দ্র হিসাবে রয়েছে এখানে বাবলাকোনা কালচারাল একাডেমী, জাদুঘর,লাইব্রেরী,গবেষণা বিভাগ ও মিলনায়তন। যেখানে থেকে আদিবাসী সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা সম্ভব পর্যটকদের। এখানে রয়েছে কর্ণঝোড়া ও ঢেউফা নদী। বর্ষাকালে ঢেউফা নদী জোয়ারে কানায় কানায় উথলে উঠে। কিন্তু শীতে হয়ে শীর্ণকায়া। কিন্তু নদীর স্রোত কখনই বন্ধ হয়না। সারা বছর আপন মনেই বয়ে চলে এই নদী। এর বুকের বিশাল বালুচড় দেখলে মনে হবে পাহাড়ের কূলঘেষা এক বিকল্প সমুদ্র সৈকত। যাদের বসবাস: দিঘলকোন