বকশীগঞ্জঃ নির্বাচনী তপসিল ঘোসনা না হলেও জামালপুরের বকশীগঞ্জে চলেছে নির্বাচনী আমেজ। পুরো উপজেলাতে বাজছে নির্বাচনী ডামাডোল। প্রার্থীরা বসে নেই। ব্যানার ফেস্টুনে জানান দিচ্ছেন প্রার্থীতা। চায়ের দোকান গুলো চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন। নতুন ও পুরাতন নিয়ে তুলনা।
৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা গঠিত। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আধিপত্য দেখালেও স্থানীয় নির্বাচনের চিত্র পুরোটাই উল্টো। এখন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ের স্বাধ পায়নি সরকারী দল আওয়ামীলীগ। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের অবস্থা সবসময়ই শোচনীয়। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিতে জয় পায় আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা। বাকী দুটোতে জয় পায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বাছায়ের ক্ষেত্রে ছিল উদসীনতা। ফলে জয় বঞ্চিত ছিল বিএনপি।
বকশীগঞ্জ পৌরসভা গঠনের কারণে সীমান্ত জটিলতায় দীর্ঘ ৫ বছর যাবত ঝুলে রয়েছে বাট্টাজোড় ও বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সম্প্রতি এই দুই ইউনিয়নের সীমান্ত জটিলতা নিরসনসহ ওয়ার্ড বিভাজনও সম্পন্ন করার ফলে আসছে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ এই ইউনিয়নও ভোট গ্রহন হবে বলে জানা গেছে।
ধানুয়া কামালপুরঃ ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নে একটানা ৩বার চেয়ারম্যানের পদে বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তুফা কামাল। গত নির্বাচনী হামলা ও মামলার কারণে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হাসান জোবায়ের হিটলার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকৈ সরে আসতে বাধ্য হয়। পরে সহজ জয় পায় মোস্তুফা কামাল। এবার প্রেক্ষাপটে রয়েছে ভিন্নতা। একের পর এক মামলা জড়িয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তুফা কামাল এখন অনেকটাই কোনঠোসা। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহন নিয়েও রয়েছে সংশয়। আওয়ামীলীগের দুর্গখ্যাত কামালপুর ইউনিয়নের ভুমি গোলাম মোস্তুফার দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থীই জয়ী হতে পারেনি। এবার কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদটি পুনঃ উদ্ধারের সুযোগ রয়েছে আওয়ামীলীগের সামনে।
বগারচরঃ বগারচর ইউনিয়নটি আওয়ামীলীগের ঘাটি হলেও দলীয় কোন্দলের কারণে সুবিধা আদায় করতে পারেনি আওয়ামীলীগ। গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম লেচুর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও আওয়ামীলীগের প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান জয়ী হতে পারেনি। এদিকে নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন নজরুল ইসলাম লেচু। এদিকে এবারের নির্বাচনে আমেরিকান প্রবাসী মাসুম আলম অনেক আগে থেকেই মাঠে রয়েছেন। আওয়ামীলীগের প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান ও বর্তমান চেয়ারম্যানের দুজনেরই এখন সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছেন আমেরিকান প্রবাসী মাসুম আলম।
সাধুরপাড়াঃ সাধুরপাড়া ইউনিয়ন বিগত নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও নির্বাচনের পর দলীয় জয়ী প্রার্থী মাহামুদুল আলম বাবু তার কার্যক্রম দিয়ে অতীতের দুঃখ ভোলাতে সক্ষম হয়েছেন। নির্বাচনের পর মাহামুদুল আলম বাবু স্বচ্ছতার সাথে পুরো ৫টি বছর জনগনের সেবা করার ফলে তার জনপ্রিয়তায় তার ধারে কাছে নেই। । সাধুরপাড়া ইউনিয়নটি মুলত জামাত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে পরিচিত হলেও একমাত্র মাহামুদুল আলম বাবুকে দিয়ে আওয়ামীলীগের জয় ধরা রাখা সম্ভব মনে করেন স্থানীয় ভোটাররা। এছাড়া সাধুরপাড়া ইউনিয়নে জাতীয় পাটির সাবেক নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির, বিএনপির প্রার্থী সোনা মিয়া, যুবনেতা রাশিদুল হক, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল ছালাম মাস্টারের নাম শোনা যাচ্ছে।
নিলক্ষিয়াঃ নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাত্তার। গত নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে তিনি নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে নতুন মুখ নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাসিবুর রহমানের নাজারের কন্যা মেহজাবিন অরিন দীর্ঘদিন থেকে মাঠে রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে তিনিই হচ্ছেন নির্বাচনী মাঠে ট্রাম্প কার্ড। নারী বান্ধব সরকারে মেহজাবিন অরিন ইত্যিমধ্যেই আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আশায় মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদিকে মাঠে নেমেছেন আরেক সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি। অন্যান্য প্রার্থী থাকলে মুলত এই তিনজনের মধ্যে লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে। এক্ষেত্রে জয় পরাজয়ের হিসাব অত্যন্ত জটিল।
মেরুরচরঃ মেরুরচর ইউনিয়নের সমিকরণ অত্যন্ত জটিল। মাটির টানে তারা প্রার্থী নির্বাচন করে থাকেন। তারপরেও বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জেহাদ নিরিবিচ্ছন্ন ভাবে মাঠে রয়েছেন। ইত্যিমধ্যেই যুব সমাজের নিকট নিজের আদর্শ বলে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। জাহিদুল ইসলাম জেহাদের নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। তবে তার জয়ে খানিকটা বাগড়া দিবে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হক। এদিকে সাবেক চেয়ারম্যান মাহাবুব হক রয়েছেন মাঠে। এলাকাভিত্তিক জনপ্রিয়তাই কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। বিএনপি প্রার্থী ও এলাকা ভিত্তিক ভোটার হিসাবে মেরুরচর ইউনিয়ন নির্বাচনে কে জয় পায় তা বলা অনেক কঠিন।