শেখ মুজিবের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য শত্রুরা তাঁকে রাষ্ট্রপরিচালনায় ব্যর্থ প্রমাণ করতে আদাজল খেয়ে উঠেপড়ে লেগেছিলো। সেই ষড়যন্ত্রে শামিল ছিলো তৎকালীন হাইয়েস্ট সার্কুলেটেড পত্রিকা ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ও। মৃণাল সেনের ‘আকালের সন্ধানে’র মতো ইত্তেফাকও দুর্ভিক্ষের সন্ধানে বিশেষ এসাইনমেন্ট দিয়ে রিপোর্টার শফিকুল কবির এবং ফটোগ্রাফার আফতাব আহমেদকে পাঠিয়েছিলো রংপুরের কুড়িগ্রামে।
আগে থেকেই সবকিছু নির্ধারিত ছিলো। বিশেষ একটি নৌকায় বিশেষ একজনের পথ প্রদর্শন বা গাইডেন্সে বিশেষ একটি অঞ্চলে গিয়ে একটি হতদরিদ্র পরিবারের অনাহারী মেয়ে বাসন্তীকে নগদ পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে রাজি করানো হয় একটি ফটোসেশনে। দরিদ্র্ বাসন্তী চকচকে পঞ্চাশ টাকার নোটটি পাবে যদি একটি ছেঁড়া জাল সে পরিধান করে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্যে। সেই সময়, ১৯৭৪ সালে, হতদরিদ্র বাসন্তীর কাছে পঞ্চাশটি টাকা রীতিমতো স্বপ্নের ব্যাপার। বাসন্তী রাজি হয়েছিলো। শফিকুল পঞ্চাশ টাকার নোটটি বাসন্তীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। গাইড-এর দূতিয়ালীতে সংগৃহিত ছেঁড়া জালটি গায়ে জড়িয়ে কলার থোড় সংগ্রহ করছে অনাহারী বাসন্তী। তার পাশে দুর্গতি নামের ছিন্ন পোশাকের আরেকটি মেয়ে। আফতাবের ক্যামেরা সেই পূর্বপরিকল্পিত সাজানো ছবিটি ধারণ করেছিলো। রংপুর মিশন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করে ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন ইত্তেফাকের রিপোর্টার সফিকুল আর ফটোগ্রাফার আফতাব। আফতাবের তোলা ভুয়া সেই ছবিগুলোর একটি ছাপা হয়েছিলো ইত্তেফাকের প্রথম পাতায়। আমেরিকার বিশ্বস্তঅনুচর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আর ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনরা সেটা ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় লীড ফটো হিসেবে ছাপিয়ে বিশ্বব্যাপী শেখ মুজিবকে চরম ব্যর্থ একজন শাসক হিশেবে প্রমাণ করে মুজিবকে উৎখাত কিংবা হত্যার প্রেক্ষাপট নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। দেশে তো বটেই, আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো ছবিটি। এর এক বছরের মাথায় ১৯৭৫এর ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছিলো নৃশংসভাবে, সপরিবারে।
এখন পালা হচ্ছে তার মেয়ে শেখ হাসিনা।.. একটি চক্র শেখ হাসিনার সকল উদ্যোগ ও সফলতাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। খোজা হচ্ছে আরেকটি বাসন্তির, যেটা দিয়ে শেখ হাসিনাকে বেকায়দায় ফেলানো যায়। চলবে…