গোলাম রাব্বানী নাদিমঃ মেঘ যে দিকে ছাতাটা সেদিকে ধর, দেখবে তুমি থাকবে নিরাপদ এভাবেই সু-পরামর্শ দিলেন আমার এক হিতাকাঙ্খী।শোনর পর বললাম, বোঝলাম না, তারপর তিনি বললেন বিস্তারিত। আরেকটু আগ বাড়িয়ে বলতে লাগলেন, চারিদিকে এত অনিয়ম, এত দুর্নীতি, বর্তমান সমাজে তোমার কথা গুলো বা লেখা গুলো একে বারেই মুল্যহীন। কেননা দুর্নীতিবাজদের সংখ্যাটা এতটা বেড়ে গেছে ভাল মানুষ পাওয়া দুস্কর।
কথাগুলো মনদিয়ে শোনালাম। পরে ছোট্ট করে প্রশ্ন করলাম এখন কি করব? সোজা সাপ্টা উত্তর, সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চল, এতে পকেটও ভরবে, ঝামেলাও এড়ানো সম্ভব হবে।
১৫ ফেব্রুয়ারী সারারাত-সারাদিন তার কথা গুলোই বার বার মনে পড়ে। অবশেষে নিজের কাছে বারবার প্রশ্ন করে নিজে নিজে উত্তর পেতে চেষ্টা করলাম। আমরা সাংবাদিক, আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্যটা কি। সমাজের ত্রুটিপুর্ন দিকগুলো তুলে ধরে জনসস্মুখে প্রকাশ করাই প্রধান দায়িত্বই নয় কর্তব্যও বটে।
কিন্তু যারা এসব অনিয়মের সাথে জড়িত তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী ও প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। এর সাথে জড়িয়ে পড়েছে মেঘ যে দিক, ছাতা সেদিক মার্কা সাংবাদিকরা। যেখানে অযোগ্যতাই যোগ্যতা, সেখানে যোগ্যতার দরকার কি? অযোগ্য হলেই তো চলে।কিন্তু তুমি অধম হলেও আমি উত্তম হইব না কেন? দুর্নীতিবাজদের কালো থাবায় সমাজটাকে ধ্বংস করতে দেওয়াতো যায় না, নিজের যতটুকো সম্বল তা দিয়ে প্রতিবাদ করতে হবে।
সম্প্রতি ঘটনাঃ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বহুল প্রচারিত একটি প্রতিবন্দি স্কুলে যাওয়া হয়েছিল। গিয়ে যা দেখলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বিদ্যালয়টিতে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১০জন কিন্তু স্কুলের শিক্ষকের সংখ্যা ৩০জন। শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৩গুণ বেশি। যদিও কোন সরকারী অর্থয়ানে নয়, ব্যক্তিগত অর্থয়ানে স্কুলটি পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০১৭ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলেও সাইনবোর্ডে ২০০৩ লেখা।স্কুল নিয়ে এত রাখঢাক কেন? উপকার যদি করতেই হয় তবে সঠিক ও সত্যভাবেই করা উচিত। অন্যায় ও অনিয়ম করে নয়।
সাংবাদিকের উপস্থিতি স্কুলে অবস্থানরত শিক্ষকদের মাঝে ছুটাছুটি। কেন সেখানে যাওয়া হল? কে পাঠিয়েছে? উদ্দেশ্য কি? এ ধরনের নানান প্রশ্ন।
প্রতিটি উত্তর শেষে যখন জানতে চাইলাম শিক্ষার্থী কত আর শিক্ষক সংখ্যা কত? প্রতিবন্দি বিশেষ শিশুদের শিক্ষা দানের প্রয়োজণীয় প্রশিক্ষণ রয়েছি কি না? প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন।
পরদিন সচিত্র একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে অভিযোগ আর অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত সাংবাদিককে শায়েস্তা করতে নারী নির্যাতনের অভিযোগ। অন্যান্য শিক্ষকদের ভাষ্য সেখানে একটি শিক্ষিকাকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার জন্যই নাকি স্কুলে যাওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে ঘটনাটি। যদিও থানার ওসির চৌকোষ বিবেচনায় ঘটনাটি একটি সাজানো তা প্রমাণিত হয়।
এখন প্রশ্ন হল একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি এ ধরনের মিথ্যা কথা বলতে পারে, সেখানে কি শিক্ষা দেওয়া হবে? প্রতিবন্দি শিশুদের নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি যদি জনসম্মুখে আনা যায় তবে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ উঠে, আর সে গুলো শিক্ষকরাই করে তবে ওই শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা আর যাইহোক সু-শিক্ষা আশা করা যায় না। ওসব মিথ্যাবাদী দ্বারা শিক্ষিত শিশুরা সমাজে সুনাগরিক হতে পারবে না, তা হলফ করেই বলা যায়।
এখানেই শেষ নয়, ওই অনুসন্ধানি সংবাদের পর মনোনিত সাংবাদিক দিয়ে স্কুলের স্বপক্ষে সংবাদ পরিবেশন করানো হয়।
এটাই শেষ নয়, বর্তমানে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সংবাদ নিয়ে অশ্লীল স্টাটাস দিয়ে প্রতিবাদ করে জনৈক এক শিক্ষিকা। যদিও এর জবাব সাধারন মানুষও সমানভাবে দিয়েছে।
প্রশ্ন, প্রতিবাদ ও জবাব এগুলোই স্বার্থকতা বৈ আর কি?
গোলাম রাব্বানী নাদিম, সম্পাদক, সাপ্তাহিক বকশীগঞ্জ।