স্টাফ রিপোর্টার
শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ সুরুজ্জামানকে বিধি বর্হিভূতভাবে অব্যহতি পত্র দেয়ায় কলেজটির শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ সরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধানমতে নিয়োগপত্র পেয়ে একদিন পর ৩১ মার্চ উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন মোঃ সুরুজ্জামান। কলেজটি ডিগ্রি পর্যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধির্ভূক্ত হওয়ায় উপাধ্যক্ষ পদটি একটি সৃষ্ট পদ।
অধ্যাবদি কলেজটি ডিগ্রি পর্যায়ে এমপিও ভূক্ত না হওয়ায় উপাধ্যক্ষ পদের বিপরীতে সরকারি বেতন-ভাতা প্রদানের কোন সুযোগ নেই। বর্তমান উপাধ্যক্ষ মোঃ সুরুজ্জামান নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে কলেজ থেকেও আর্থিক কোন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন না। তিনি তার পূর্ববর্তী এমপিও ভূক্ত পদ সহকারী অধ্যাপক (কম্পিউটার অপারেশন) হিসাবে বেতন ভাতাদি উত্তোলন করছেন।
শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ সুরুজ্জামান জানান, ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ নিয়োগপ্রাপ্ত হবার পর থেকে অধ্যাবদি পর্যন্ত তাকে উপাধ্যক্ষ হিসাবে কোন প্রকার দায়িত্ব প্রদান করা হয়নি। বিগত ২০১৭ সালের ৩ জুন অত্র কলেজের গভর্ণিং বডির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান মোতাবেক কমিটির মেয়াদ পূর্তির তিন মাস পূর্বে অভিভাবক প্রতিনিধি ও শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশনা থাকলেও কলেজের অধ্যক্ষ অভিভাবক প্রতিনিধি ও শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন করার গোপনীয় তৎপরতায় লিপ্ত হন। সে অনুযায়ী বিগত ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল তারিখে এজেন্ডা বিহীন একটি সভা আহবান করেন। উক্ত সভায় অধ্যক্ষ এই নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে গোপনীয়ভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার তৎপরতায় লিপ্ত হন। যা বিধিসম্মত না হওয়ায় উপাধ্যক্ষ মোঃ সুরুজ্জামান কলেজ শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনটি আইনসম্মতভাবে করার জন্য কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি ডাঃ এম এ মান্নান খানকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। বিষয়টি আমলে না নিয়ে অধ্যক্ষ গোপনীয়ভাবেই তা সম্পন্ন করেন। এই নিয়ে উপাধ্যক্ষ গভর্ণিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষকে আইনগত নোটিশ প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে বিগত ২০১৭ সালের ১ জুন তারিখে জামালপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩৫১ (অন্য প্রকার), ২০১৭। মামলাটি দায়ের করায় নবগঠিত কমিটির ১১/০৭/২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত ৩২তম সভায় উপাধ্যক্ষকে সতর্কীকরন নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৮/০৭/২০১৭ তারিখে সতর্কীকরন নোটিশ প্রদান করা হয়। একই সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, উপাধ্যক্ষ’র পূর্ববর্তী পদ সহকারী অধ্যাপক কম্পিউটার অপারেশন থেকে পদত্যাগ করার পত্র দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে মোতাবেক ২৩/০৭/২০১৭ তারিখে উপাধ্যক্ষকে তার পূর্ববর্তী পদ সহকারী অধ্যাপক কম্পিউটার অপারেশন হতে পদত্যাগের পত্র দেয়া হয়। বিগত ২৬ জুলাই ২০১৭ তারিখে উপাধ্যক্ষ উক্ত পত্রের বিধিসম্মতভাবে জবাব প্রদান করেন। শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সংক্রান্ত উপাধ্যক্ষ’র দায়ের করা মামালাটি ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর আদালতে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। আদালত উভয় পক্ষের শুনানী শেষে কথিত নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিদের কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
উপাধ্যক্ষ মোঃ সুরুজ্জামানের অভিযোগ, আদালত ২৫ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর কলেজ গভর্ণিং বডি আদেশের পূর্বের ২১/১০/২০১৭ তারিখ দেখিয়ে উদ্দেশ্যেমূলক একটি সভা করে। তথাকথিত ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, উপাধ্যক্ষ মোঃ সুরুজ্জামান সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে পদত্যাগ না করলে তাকে উপাধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হবে। সে মোতাবেক ০৪/১২/২০১৭ তারিখে উপাধ্যক্ষকে একটি পত্র দেয়া হয়। উপাধ্যক্ষ বিধিসম্মতভাবে সেই পত্রেরও জবাব প্রদান করেন এবং বিষয়টি নিয়ে গভর্ণিং বডির সভাপতি ডাঃ এম এ মান্নান খানের সাথে কথা বলেন। অধ্যক্ষ’র নানা বেআইনি কর্মকান্ডে ভীতশ্রদ্ধ হয়ে গভর্ণিং বডির সভাপতি বিগত ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ১১/০১/২০১৮ তারিখে পুনরায় অধ্যক্ষ একেএম তফিকুল ইসলাম উপাধ্যক্ষ মোঃ সুরুজ্জামানকে আরো একটি পত্রের মাধ্যমে অবহিত করেন যে, অত্র পত্র প্রাপ্তির ৩ দিনের মধ্যে পূর্ববর্তী সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে পদত্যাগ না করলে উপাধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যহতি প্রদান করা হবে। একই তারিখে ওই পত্রের জবাবে মোঃ সুরুজ্জামান বিস্তারিত বিষয় উল্লেখ করে জানান যে, তার বক্তব্য গভর্ণিং বডির পরবর্তী সভায় উপস্থাপনপূর্বক আলোচনা সাপেক্ষ্যে পত্রটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। এর পরেও কলেজের অধ্যক্ষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন করে গত ৩০ জানুয়ারি উপাধ্যক্ষকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যহতি প্রদান পত্র প্রদান করেন।
কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ সুরুজ্জামানের অভিযোগ, তাকে অব্যহতি প্রদানের এই প্রক্রিয়াটি আইন বর্হিভূত, একটি প্রতিহিংসামূলক ঘটনা। এটি তার প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা মাত্র। এ ঘটনায় তিনি আদালতে যাবার কথাও বলেন। তিনি আরো বলেন, উপাধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যহতি প্রদানের প্রক্রিয়া বিধিসম্মত না হওয়ায় এবং হাজিরা খাতায় উপাধ্যক্ষ হিসেবে তার নাম না থাকায় কলেজের সংখ্যাগরিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীর সম্মতিক্রমে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাজিরা খাতাটি উপাধ্যক্ষ’র কক্ষে তালাবন্ধ রাখা হয়েছে।
শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ সুরুজ্জামানকে বিধি বর্হিভূত ও প্রতিহিংসামূলক উপাধ্যক্ষর পদ থেকে অব্যহতি পত্র দেয়ায় কলেজটির শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিধিবর্হিভূত এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবার আভাস দিয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষক।