গোলাম রাব্বানী নাদিম
নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ৪ ডিসেম্বর জামালপুরের কামালপুরের মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তুফা কামালের উদ্যোগে মুক্তযোদ্ধাদের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসানের সিদ্দিকের সভাপতিত্ব করেন। পরে আলোচনা সভা শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় বকশীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় একটি সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয় পাকসেনা। শত্রুমুক্ত হয় ১১নং সেক্টরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর রণাঙ্গন। স্বাধীন বাংলার মাটিতে আকাশে উড়ে বিজয়ী পতাকা।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে ৭১ সালে ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধে এই অঞ্চলে ১১নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। আর ১১নং সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন মুক্তিযোদ্ধার অন্যতম বীর সেনানী কর্ণেল আবু তাহের বীর উত্তম।
বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর থেকে ২ কিঃমিঃ অদুরে ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জে ১১নং সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল। যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে ১১নং সেক্টরকে আট ভাগে সাবসেক্টরে বিভক্ত করা ছিল। সাবসেক্টর গুলো হচ্ছে, মহেন্দ্রগঞ্জ, মানকারচর, পুরাকাশিয়া, ডালু , বাগমারা , শিববাড়ী , রংড়া, ও মহেশখোলা। ১১নং সেক্টরের ২ কিলোমিটার অদুরেই ছিল ধানুয়া কামালপুর একটি শক্তিশালী দুর্ভেদ্য সুরক্ষিত পাকসেনাদের ঘাঁটি। ১১নং সেক্টরে নিয়মীত বাহিনীর ৩ হাজার ও ১৯ হাজার গনবাহিনীসহ মোট মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ২২ হাজার। এই সেক্টরে ১২ জুন থেকে ২৮ নভেন্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সাথে পাকসেনাদের বিভিন্ন সময়ে ১২ বার সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে।
ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিনসহ মোট ১৯৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। নিহত হয়েছেন ৪৯৭ জন পাকসেনা। ১৩ নভেম্বর কর্ণেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে কোম্পানী কমান্ডার লেঃ মিজান , ক্যাপ্টেন মান্নান , মুক্তি যোদ্ধা সাইদ কোম্পানী ও ভারতীয় বাহিনীর ২টি কোম্পানী আর্টিলারী সাহায্যে রাতে কামালপুর শত্রু ক্যাম্পে পরিকল্পনা মাফিক আক্রমন করা হয়। এই সম্মুখ যুদ্ধে কামালপুরে শত্রু পক্ষের ১ জন মেজরসহ ২ কোম্পানী পাকসেনা নিহত হয়।
১৪ নভেম্বর পাকসেনাদের একটি মর্টার সেলের আঘাতে সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল আবু তাহেরের বাম পায়ে মারাক্তক আহত হন। বাকী কদিনের জন্য সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন উইংকমান্ডার হামিদুল্লাাহ খান।
সামরিক অভিযানের পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী ২৪ নভেম্বর থেকে কামালপুর পাকসেনা ক্যাম্প অবরোধ করে রাখেন মুক্তিযোদ্ধারা। ৩ ডিসেম্বর যৌথকমান্ডের সিদ্ধান্ত মতে অবরোদ্ধ পাকসেনা ক্যাম্পে একটি চিঠি পাঠানো হয়।
বকশীগঞ্জের বৈষনব্ব পাড়ার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা বশীর আহমদ বীর প্রতীক মৃতু নিশ্চিত জেনেও জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে ঐতিহাসিক সেই চিঠি নিয়ে পাকসেনা ক্যাম্পে হাজির হন। চিঠিতে লেখা ছিল তোমাদের চারদিকে যৌথবাহিনী ঘেরাও করে রেখেছে। বাচঁতে চাইলে আত্মসর্মপণ কর, তা না হলে মৃত্যু অবধারিত। এই চিঠি পেয়ে অগ্নিমূর্তি ধারন করে পাকসেনা কমান্ডার আহসান মালিক। কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে অবরুদ্ধ কমান্ডার বীর বশিরকে না মেরে নির্যাতন করে। অন্য দিকে বশিরের ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা চিন্তা গ্রস্থ হয়। সবার ধারনা বশিরকে মেরে ফেলেছে পাকসেনারা। তাই আক্রমনের জন্য সবাই প্রস্তুত। ক্ষনিকের মধ্যেই সিদ্ধান্ত পাল্টে দিয়ে আরেকটি চিঠি দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সঞ্জুকে পাঠানো হয় পাকসেনা ক্যাম্পে। জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে বীরদর্পে দ্বিতীয় চিঠি নিয়ে সঞ্জু শত্রু ক্যাম্পে যায়। সেই চিঠিতেও লেখা ছিল উপায় নেই বাচঁতে হলে আত্মসর্মপন করতে হবে।
এদিকে আকাশে চক্কর দিতে থাকে ভারতীয় যুদ্ধ বিমান।
অবশেষে গ্যারিসন অফিসার আহসান মালিকসহ বেলুচ, পাঠান ও পাঞ্জাবী সৈন্যের ১৬২ জনের একটি দল আনুষ্ঠানিকভাবে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসর্মপন করে। শত্রু মুক্ত হয় বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর। বীর মুক্তিযোদ্ধা বশির ও সঞ্জু বাংলার লাল সবুজের বিজয়ী পতাকা উত্তোলন করেন কামালপুরের মাটিতে।
ধানুয়া কামালপুর থেকেই মিত্র বাহিনী বিজয়ের পতাকা নিয়ে বকশীগঞ্জ শেরপুর জামালপুর ও টাংগাইল শত্রু মুক্ত করে ব্রিগেডিয়ার হরদেব সিং ক্লেয়ার ও মেজর জেনারেল নাগরা প্রথম ঢাকায় প্রবেশ করেন।
এরপর থেকে প্রতিবছর ধানুয়া কামালপুর এইদিনে মুক্তদিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
গোলাম রাব্বানী নাদিম
০১৭১৩৫২৩৩৫৫
জামালপুর।