বিশেষ প্রতিনিধি ঃ জামালপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক সংকটের কারণে ভোগান্তির শিকার বিচার প্রার্থীরা। ঝুলে আছে কয়েক হাজার মামলা। ধার্য তারিখের পর তারিখ পড়ছে মামলার। বছরের পর বছর মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে মামলার বাদী-বিবাদীরা।আইনজীবী সমিতি ও আদালত সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে নারী নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল, স্পেশাল জজ কোর্ট, অতিরিক্ত দায়রা জজ (শিশু আদালত) বিদ্যুৎ কোর্ট ও ৩নং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক নেই। বিদ্যুৎ আদালতসহ আরো কয়েকটি আদালতেও এ সংকট রয়েছে। বিচারকরাও দায়িত্বপ্রাপ্ত আদালত ছাড়াও অন্যান্য আদালতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। আদালতগুলোতে জমা পড়ে আছে মামলার স্তূপ। মামলা জটে বিচারের অপেক্ষায় নারী নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে ২২’শ, অতিরিক্ত দায়রা জজ (শিশু) আদালতে ফৌজদারি ১ হাজার ৬২৬ ও সিভিল ১’শ ৮৬, স্পেশাল জজ আদালতে ক্রিমিনাল ৬১৮ ও দেওয়ানি আপিল মামলা ১৪৮টি মামলাসহ অসংখ্য মামলা। দীর্ঘদিন ধরে এসব মামলা ঝুলে থাকায় বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
নারী নির্যাতন মামলা নিয়ে আদালতে আসা মাদারগঞ্জের চর গুজামানিকা গ্রামের আশা বেগম (২১) বলেন, নারী নির্যাতন আদালতের বিচারক না থাকায় প্রতিদিন এসে ঘুরে যাচ্ছি। স্বামী মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রাম্য শালিসে কাজ হয়নি, তাই আইনের আশ্রয় নিতে নির্যাতনকারী স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য কয়েক দিন ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুর ঘুর করছি।
ভূমি আদালতে মামলার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে সেখানে দায়ের হওয়া মামলাগুলো ধীরগতিতে এগুচ্ছে। বকশীগঞ্জ উপজেলার সারমারা গ্রামের আবুল বাশার বাদী হয়ে ২০০৫ সালে জমি কেনাবেচায় প্রতারণার অভিযোগে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, ১৬ বছর ধরে মামলা নিয়ে আদালতে আসা যাওয়া করছি।
মেলান্দহের সাদুল্লাহ প্রামাণিক ২০০৮ সালে বিআরএস সংশোধনী মামলা করেন। ৯ বছর ধরে মামলা চলছে। ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, মামলার তারিখে কাজের ক্ষতি করে জামালপুরে কোর্টে হাজিরা দিতে আসি। যাতায়াতে ১৫০ টাকা গাড়িভাড়া গুনতে হয়। উকিলের ফিস তো ৫০০ টাকার নিচে দেওয়া যায়না। তারপর মহুরিকে খুশি করাসহ নানা খরচে পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। অনেক দিন না খেয়েই থাকি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে আমার পথের ভিখারি হওয়ার উপক্রম।
এ প্রসঙ্গে এডভোকেট বাকি বিল্লাহ বলেন, বিচারক না থাকায় মামলার দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ছে। প্রতি ধার্য তারিখে বাদী-বিবাদীরা হাজিরা স্বাক্ষীসহ মামলার অন্যান্য কাজ না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। কর্মঘণ্টা, আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হচ্ছে বিচার প্রার্থীরা। এমনকি আমরা আইনজীবীরাও হয়রানীর শিকার হচ্ছি।
জামালপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আমান উল্লাহ আকাশ বলেন, ৩টি আদালতে দীর্ঘদিন ধরে বিচারক নেই। বিচারক সংকটের কারণে মামলার অগ্রগতি হচ্ছেনা। আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি চিফ জুডিশিয়াল আদালতে শূন্য পদে বিচারক নিয়োগের দাবী জানান তিনি।