নিজস্ব প্রতিবেদক॥
এবার জামালপুরে মেহেদী হাসান প্রান্ত নামের ফ্যাশন ডিজাইনার এক প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে বাসায় ডেকে নিয়ে এক কলেজছাত্রীকে বেঁধে ধর্ষণ ও মারপিট করার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় ধর্ষিত ওই মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১)৩০ ধারায় প্রতারক মেহেদী হাসান প্রান্তকে প্রধান আসামি এবং তার বাবা শিক্ষাকর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম ও তার মা লিপি বেগমকে আসামি করে মঙ্গলবার রাতে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মামলার আসামিরা গা ঢাকা গিয়েছে।
জানা গেছে, মেহেদী হাসান প্রান্ত ঢাকায় বিজিএমই এর আওতাধীন একটি কারিগরি কলেজে ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। তার বাবা খোরশেদ আলম জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে চাকরি করেন। তারা জামালপুর শহরের নয়াপাড়ায় জাকারিয়া হাউজ নামের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। ধর্ষিত মেয়েটি একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের বাসা জামালপুর পৌরসভার চালাপাড়া এলাকায়। মেয়েটি জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার বাবা রাস্তায় রিকশাভ্যানে ফেরি করে খাসি-গরুর রান্না করা ভুড়ি, ছোলা বিক্রি করে সংসার চালান।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, কলেজে লেখাপড়া করার সময় মেয়েটির সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে ওই যুবক মেহেদী হাসান প্রান্ত। মেহেদী দীর্ঘ দিন ওই মেয়েটির পেছনে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে ঘুরঘুর করতে করতে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। এই সুযোগ নিয়েই মেহেদি তার শারীরিক অসুস্থততার কথা বলে বছর দুয়েক আগে মেয়েটিকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও নগ্ন ভিডিও ধারণ করে। ওই ভিডিওর স্ক্রিনশট নিয়ে মেয়েটির ইমোতে পাঠিয়ে দিয়ে হুমকি দেয়। ওই নগ্ন ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়ে আসছিল মেহেদী। মেহেদী এভাবে টানা প্রায় দুই বছর ধরে মেয়েটিকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ, হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় মেহেদী ৩০ জুন মেয়েটিকে আবার ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছে। ওইদিন বিকেলে মেহেদী মেয়েটিকে তাদের নয়াপাড়ার ভাড়া বাসায় যেতে বলে। ওই যুবকের কথামতো মেয়েটি ওই বাসায় গেলে কিছু বোঝার আগেই তার হাত-পা বেঁধে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। মেয়েটি তখন তাকে বিয়ে করার কথা বললে ক্ষীপ্ত হয়ে তাকে মারপিট করে। তার চিৎকারে মেহেদীর মা লিপি বেগম ছুটে গিয়ে তিনিও তাকে মারপিট ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে মেয়েটির মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে এবং সীমকার্ড ও মেমোরি কার্ডটিও তাকে দেয়নি। এ সময় ঘটনা জানতে পেরে মেয়েটির বাবা ও মা ওই বাসায় গেলে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী লোক ঘটনা মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলে জোরপূর্বক তিনটি স্ট্যাম্পে একটি সাদা কাগজে মেয়েটির বাবা ও মায়ের স্বাক্ষর নিয়ে ঘটনা ফাঁস না করার জন্য হুমিক দিয়ে তাদেরকে বাসা থেকে বের করে দেয়।
এ ঘটনায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হুমকি ও ভয়ভীতির মুখে ঘটনার নয়দিন পর মেয়েটির বাবা-মা মানবাধিকারকর্মীদের সহায়তায় মেয়েকে নিয়ে জামালপুরের পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওনক জাহানের সাথে দেখা করে বিষয়টি ঘটনা খুলে বললে পুলিশ সুপার আইনগত সহায়তার আশ্বাস দেন এবং সদর থানায় মামলা দায়ের করতে বলেন।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিমুল ইসলাম বলেন, মেয়েটির বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেহেদী হাসান প্রান্ত ও তার বাবা-মাকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।