গোলাম রাব্বানী নাদিম
আলীরপাড়া থেকে ফিরে ঃ জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের সারমারা নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক গাজী মোঃ শামসুল হক ও আম্বিয়া আক্তারুন্নেছার ঘরে তারাদের ছড়াছড়ি।
কন্যা শুন্য ৯টি ছেলের মধ্যে সবাই একেক জন একটি করে তারা। মেধা ও নিষ্ঠায় বলিয়ান হয়ে তারা দেশ ও মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের কর্মকান্ড এখন দেশব্যাপি, তাদের সুনাম আজ দেশ থেকে দেশান্তরে।
মরহুম গাজী শামসুল হক ১৯৮৫ সালে ও তার সহধর্মিনী আম্বিয়া আক্তারুন্নেছা ১৯৯৯ সালে পরলোক গমন করেন।
তারা তাদের জীবদ্দশায় শিক্ষানুরাগী ও সমাজে অত্যন্ত সম্মানী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যা এলাকা বয়োজ্যেষ্ঠ প্রবীন ব্যক্তিদের মুখে শোনা যায়।
সময়ের পরিক্রমায় অনেকই না চিনলেও বর্তমানে বকশীগঞ্জে হাজী আমানুজ্জামান বেশ পরিচিত। তার পিতা ও মাতাই হচ্ছেন মরহুম গাজী শামসুল হক ও আম্বিয়া আক্তারুন্নেছা।
আলহাজ্ব গাজী মোঃ আমানুজ্জামান একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবি। তিনি আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর। এছাড়া উক্ত প্রতিষ্ঠানে তার শেয়ারও রয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন সংস্থায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে একেকজন একটি করে তারা হয়ে গেছেন।
প্রথমে আসি সবচেয়ে বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোঃ আক্তারুজ্জামান। তিনি ছিলেন সেনা বাহিনীর প্রকৌশল সার্ভিসের ডিভিশনাল প্রকৌশলী। তার ৪ ছেলের মধ্যে সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত।
পরের জন গাজী মোঃ আক্রামুজ্জামান ছিলেন ব্যাংকার। তার তিন ছেলের মধ্যে একজন সেনাবাহিনীর লেঃ কর্নেল, ১জন রয়েছেন জার্মানিতে অপর জন একটি প্রাইভেট কোম্পানীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।
৩য় জন হচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোঃ আহাদুজ্জামান। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ত্বের সাথে যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ৮ সেপ্টম্বর পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে শহীদ হন। সরকারি ভাবে এ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে একটি রাস্তা নাম করণ করা হয়েছে।
তার পরের জন বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী মোঃ আফতাবুজ্জামান, তিনিও সেনা বাহিনীর প্রকৌশল সার্ভিসের ডিভিশনাল প্রকৌশলী। তার ২ ছেলের মধ্যে একজন ব্যাংকার ও অপর জন কম্পিউটার প্রকৌশলী।
এরপর গাজী মোঃ আমানুজ্জামান তার বিষয়ে উপরেই বর্ণিত রয়েছে। বর্তমানে নিজ অর্থ ব্যয়ে ৯ একর জমির উপর একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ঢাকাস্থ বকশীগঞ্জ সমিতির সভাপতি হিসাবে ঢাকায় অবস্থানরত বকশীগঞ্জের মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন।
গাজী মোঃ আজাদুজ্জামান একজন ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবি। তিনি বর্তমানে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের এসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার ১ ছেলে MIST এ অধ্যায়নরত।
প্রকৌশলী গাজী মোঃ আলতাফুজ্জামান, তিনি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ববধায়ক প্রকৌশলী (AC) হিসাবে কাজ করে আসছেন। অসম্ভব মেধাবী আলতাফুজ্জামান প্রকৌশল বিভাগের একটি নক্ষত্র।
আলতাফুজ্জামান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন (এ্যালামানাই এসোসিয়েশন) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি।
তার স্ত্রী শাহানা শিরীন স্ব-মাহিমায় উজ্জ্বল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যঞ্চলর এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত।
তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। আলতাফুজ্জামান ২ সন্তানের জনক। ছেলে ও মেয়ে দুজনেই মেধাবী। ছেলে গাজী মোঃ শাফিউল হক বর্তমানে কানাডিয়ান সরকারের চ্যাঞ্চলর স্ট্যাটাস স্কলারশীপ নিয়ে কানাডা University of British Columbia, Vancouver এ পড়াশুনা করছেন। আর মেয়ে আফরিদা নাওয়ার ইভানা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমনোলজি বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী।
জেলখালসহ বরিশালের মৃতপ্রায় তেইশটি খাল উদ্ধার, কীর্তনখোলা নদীসহ বিভিন্ন পাবলিক ইজমেন্ট উদ্ধার এবং পরিবেশ বান্ধব বরিশাল গঠনে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সদাশয় সরকার এ পদক প্রদান করেছেন।
এছাড়া জেলা প্রশাসক হিসাবে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জনগণের সেবা দাড়গোড়ায় পৌছে দেওয়ার পন্থা অাবিস্কার করে দেশব্যাপি সুনাম অর্জন করেছেন। তার এই অাবিস্কার এখন শুধু বরিশালেই নয় সারা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় চালু রয়েছে।
ডিসি ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামনের স্ত্রী অধ্যাপক জাহানারা জামানও শিক্ষা ক্ষেত্রে অসমান্য ভুমিকা রেখে চলছেন। তিনি ময়মনসিংহ মমিনুন্নেছা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। ৩ সন্তানের জনক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান প্রথম মেয়ে সারাফ নাওয়ার বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ে ১ম বর্ষের ছাত্রী। ২য় সন্তান জাহিন সাবাব ঢাকা সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করছেন। ছোট ছেলে জারিফ সাজিন রাইফেলস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে অধ্যায়নরত।
দুর্ধর্ষ আলীরপাড়া গ্রামে জন্ম নিয়ে স্ব স্ব মেধায় আজ তারা সমাজে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করে শুধু আলীরপাড়াই নয় সারা বকশীগঞ্জের মুখ উজ্জল করেছেন।