গোলাম রাব্বানী নাদিম,
জামালপুরের লাউচাপড়া থেকে ঃ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গভীর পাহাড় থেকে নেমে আসা বন্য হাতির উৎপাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ী গ্রামের কৃষকরা। বন্য হাতির পাল নির্বিচারে ধ্বংস করছে সব্জি ক্ষেত ও গাছ-পালা। হাতির ভয়ে গ্রামবাসী কাঁচা আর আধাপাকা ধান কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। রাত জেগে পাহারা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না হাতির পালকে।
গত ২৬ জুন থেকে অনবরত ভাবে আসছে হাতির পাল।
২৭ জুন বন্য হাতির দল বন্য হাতির দল সাইফুল ও আলেছা বেগমের দোকাণ ভাঙ্গচোর করে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার ক্ষতি করে।
এছাড়া বন্য হাতির দল পাহাড়ে চাষকৃত করলা বাগানের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
জেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র লাউচাপড়ার আসেপাশে অবস্থান নেওয়ায় চলতি ঈদ মৌসুমে ভ্রমণ পিপাসু ও পর্যটকদের মনে ভয় ঢুকেছে।
মুলত আমন ও ইরিবুরো মৌসুমে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গভীর পাহাড় থেকে নেমে আসে বন্য হাতির পাল। কিন্তু এবার এই সময়ই হাতির দল ছড়িয়ে পড়েছে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ পাহাড়ে। দিনের বেলা এইসব হাতির দল গভীর পাহাড়ে লুকিয়ে থাকে। রাত গভীর হলেই হানা দেয় পাহাড়ী গ্রামগুলোতে।
গত ৩দিন যাবত হাতির দলকে ঠেকাতে বকশীগঞ্জের সীমান্তবর্তী ৭টি গ্রামের মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে আগুন জ্বেলে আর পটকা ফুটিয়ে ।
শুমনাথপাড়ার কৃষক হোসিও মং, আব্দুল হানিফ, ,দুলাল ও আবেদ আলী জানান, রাত জেগে পাহাড়া দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না হাতির দলকে। তারা জানান গত ৩দিনে সবজি ক্ষেত ও বাগান ধ্বংস করেছে। হাতির আক্রমনে নষ্ট হয়েছে অসংখ্য গাছপালা ।
তাদের অভিযোগ, ভারতীয় সীমান্তে মেঘালয় রাজ্যের গভীর পাহাড় থেকে হাতির দল বাংলাদেশ অংশে নেমে আসার পর বিএসএফ বন্ধ করে দেয় পাহাড়ী অংশের কাটাতারের গেট। ফলে চেষ্টা করেও কোনভাবেই এই হাতির দলকে ফেরানো যায় না।
সীমান্তবর্তী একাধিক গ্রামে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বসতবাড়ীতে মশাল আর ভোগা বাতি (বাঁশ ও পাট দিয়ে তৈরি মশাল) তৈরি করে রাখা হয়েছে। পাহাড়ের টিলা এবং শাল-গজারি বাগানের ফাঁকে ফাঁকে আবাদি জমির ওপর গ্রামবাসী ডেরা তৈরি করে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রত্যেহ সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত শুকনো বাঁশের মশাল জ্বালিয়ে পাহারা দিচ্ছে বাঙালি ও উপজাতি কৃষকরা। ফসলের মৌসুমে প্রতি ডেরায় ৫-৬ জন করে ছোট ছোট দলে ক্ষেতের চারপাশে অবস্থান নেয়। যেদল প্রথমে হাতির উপস্থিতি টের পায় সে দল আর্তচিৎকার করে ওঠে। এসময় আশপাশের সব দলের সদস্যরা ছুটে আসে হাতি তাড়াতে।
এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাছান সিদ্দিক বলেন, ‘অনেক সময় বনে খাদ্যাভাব দেখা দিলে হাতির পাল লোকালয়ে প্রবেশ করে। তবে জানমালের ক্ষতি এড়াতে প্রশাসনের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজনকে শান্ত ও নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ এবং আগুন জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর জন্য গ্রামবাসীকে কেরোসিন তেল সরবরাহ করা হয়েছে।’ এ ছাড়া আইইউসিএনের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) সদস্যরা নিয়মিত কাজ করছেন বলেও জানান ইউএনও।
হাতি তাড়াতে এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে কিংবা সোলার প্যানেল বসিয়ে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে স্থানীয় কৃষকরা বার বার দাবি জানালেও তাতে নেই তেমন অগ্রগতি। তবে কৃষকদের সহায়তার আশ্বাস প্রশাসনের অভিযোগ পাহাড়ী অধিবাসীদের।
কৃষিবিভাগের তথ্যমতে, বন্যহাতির উপদ্রবে শুধু বকশীগঞ্জেই বছরে গড়ে আড়াইশো থেকে তিনশো হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। আর গেল পাঁচ বছরে দুই উপজেলায় হাতির আক্রমণে মারা গেছেন ১৩ জন। আহত ও পঙ্গত্ব বরণ করেছে ২ শাতাধিক।