বিশেষ প্রতিনিধিঃ জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভায় ল্যাকটেটিং(অসহায় দরিদ্র মা’দের সহায়তা কর্মসূচি)(ল্যাকটেটিং)প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানাযায় ল্যাকটেটিং প্রকল্পে মাদার নির্বাচনকৃত কমিটির সদস্যদের তোয়াক্কা না করে একতরফা ভাবে কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার যোগসাজসে অনিয়ম ও দুর্ণীতির মাধ্যমে অতিদরিদ্র ও অসহায় মা’দের বাদ দিয়ে কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায় দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার জন্য কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৩শ কার্ড বরাদ্ধ করা হয়। এই প্রকল্পের কার্ডধারী মা’রা দুই বছরে ৪ কিস্তিতে ১২ হাজার করে টাকা সরকারী সহায়তা পাবেন। পৌরসভার ল্যাকটেটিং মাদার উপকারভোগী নির্বাচনের জন্য ১০ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। এছাড়াও কমিটির সদস্যরা হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মনোনিত ব্যাক্তি, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা, পৌরসভার সচিব, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর সকল, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা। উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও নির্বাচন কমিটি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দেওয়া তালিকা বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলররা কমিটির সদস্য থাকলেও তাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করে দরিদ্র মা’দের বাদ দিয়ে এসব তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যা টাকার বিনিময়ে স্বচ্ছল মা’দের নাম তালিকা ভুক্তি সম্পন্ন করার অভিযোগ করেছেন এলাকার অসহায় মাসহ সাধারণ মানুষ ও পৌর কাউন্সিলরা।
পৌরসভার চর ভবসুর ঠোটাপাড়ার কনিকা, নুসরাত জাহান, মনিরাসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেন নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলেও তাদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার করে টাকা উৎকোচ দাবি করা হয়েছে। তারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেননি বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন। একই অভিযোগ করেন পৌর এলাকার মহনা, খুকুসহ আরো কয়েক জন অসহায় মা।
দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরে আলম সিদ্দিকী জুয়েল অভিযোগ করেন, তাদের কাছে তালিকা চাওয়া হলে তারা দরিদ্র মা’দের তালিকা প্রেরণ কছেন। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তাদের তালিকার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি বলে উল্লেখ করেন।
দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোলাইমান অভিযোগ করে বলেন, তার দেওয়া তালিকা দরিদ্র মা’দের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে তালিকা করা হয়েছে।
একই অভিযোগ করেন ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মাসুদ ও ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাদল মিয়া এছাড়া পৌরসভার অন্যান্য কাউন্সিলরদের অভিযোগ একই।
দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর সেলিনা আক্তার এবং ৭,৮,৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসমা আক্তার বলেন, তারা কমিটির সদস্য হলেও তাদের অগোচরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তালিকা করেছেন।
এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহ নেওয়াজ শাহানশাহ বলেন, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা মনি কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচির তালিকা উৎকোচ গ্রহণ করে খামখেয়ালী মত তৈরি করেছেন। তাদের এ অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত করে যাদের পাওয়া উচিত তাদের দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক বলে জানান।
এ ব্যাপারে বর্তমান দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা মনি এবিষয়ে কোন প্রকার কথা বলতে রাজি হননি ।
অপর দিকে দেওয়ানগঞ্জের দরিদ্র মা’ ও জনপ্রতিনিধিরা এসব মাদার সহায়তা কর্মসূচির অনিয়ম অবিলম্বে তৈরি করা তালিকা বাতিল করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ।