বিশেষ প্রতিনিধি ঃ ফুটফুটে চেহারা, বাবা মার বড় সন্তান। এ বছরই জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। বিয়ে কি জিনিস এখনো বুঝে না সে। আপন মনে বিদ্যালয়ে যায় আর আসে। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বলে মাথা নিচু করে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করে। স্বপ্ন নিয়ে পড়াশুনা করছে সে। এরই মধ্যে শকুনের চোখ পড়েছে তার উপর। মানুষরূপী সেই শকুনের নজরে পড়ে জীবনটা নরকে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা পেল ময়ুরী আক্তার (১৩)।
বকশীগঞ্জ উপজেলার বগার চর ইউনিয়নের ঘাসির পাড়া গ্রামের মধু মিয়ার মেয়ে ময়ুরী আক্তার। সে স্থানীয় রোকেয়া বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা মধু মিয়া দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন। অভাব অনটনের মধ্যেও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে ময়ুরী।
কিন্তু দরিদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করে ময়ুরীর পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় শেখ ফরিদ মিয়া। চার সন্তানের জনক শেখ ফরিদ মিয়া স্থানীয় নঈম মিয়ার বাজারের রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী। বাড়ি বকশীগঞ্জ ইউনিয়নের সদর ইউনিয়নের মোহনের চর গ্রামে। স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ের করার জন্য স্কুল ছাত্রী ময়ুরীর দিকে চোখ পড়েছে এই শকুনের। ওই মেয়েকে বিয়ে করবে বলে এক বিঘা জমিও লিখে দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়।
মেয়ের বাবা মধু মিয়ার দূরসম্পর্কের আত্মীয়রা এই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে থাকে। মেয়ের বাবার মন নরম হলেও বাঁধ সাধে প্রতিবাদী মেয়ে ময়ুরী। তার এক কথা এসএসসি পাশের আগে বিয়ে করবে না সে।
এক পর্যায়ে রোববার সকালে বিয়ের পাত্র শেখ ফরিদের বড় বোন ও দুলা ভাই ফের প্রস্তাব নিয়ে যায় মেয়ের বাড়িতে। অনেক লোভ দেখায় মেয়ের বাবা ও মাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ময়ুরীর এক বান্ধবী বিষয়টি বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসান সিদ্দিককে মুঠোফোনে জানায়।
ইউএনও আবু হাসান সিদ্দিক তাৎক্ষণিক ছুটে যান মেয়ের বাড়িতে। ইউএনওকে দেখেই মধু মিয়ার বাড়িতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ইউএনও’র বাল্যবিয়েবিরোধী বক্তব্যের সঙ্গে সুর মেলাতে শুরু করেন অনেকেই।
হঠাৎ ঘর থেকে বের হয়ে ময়ুরী আক্তার ইউএনওকে জানালো, নরক থেকে বাঁচালেন স্যার।
প্রায় দুইশতাধিক নারী-পুরুষের সামনে মধু মিয়া কথা দেন তার মেয়েকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেবেন না।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু হাসান সিদ্দিক জানান, মেয়ের বাবা কথা দিয়েছেন ১৮ বছরের আগে তার মেয়েকে আর বিয়ে দেবেন না। অপরদিকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেওয়ায় শেখ ফরিদকেও কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।