স্পোর্টস ডেস্ক ঃ বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। এক সময় তার তাড়াহুড়ো স্বভাবের ব্যাটিং নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। কয়েকটি বল মিস করলেই মাথা গরম করে ফেলতেন। উচ্চভিলাষী শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে ফিরতেন। কিন্তু তার সবটাই ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে। এই বিশ্বকাপ তামিম ইকবালের জন্য নিজেকে বদলে ফেলার এক মাইলফলক। তামিম নিজেও সেটা এখন বারবার বলেন। এখন তিনি অনেক স্থির, অনেক পরিণত। এখন তাকে মাথা গরম করতে খুব কম দেখা যায়। টানা বল মিস করে গেলেও মেজাজ হারান না। বলের মেরিট বুঝে প্রাপ্য বুঝিয়ে দেন। ধৈর্য ধরে লম্বা ইনিংস খেলেন। ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করার চেষ্টা করেন। নিজেকে এমন ধীর ও সুস্থির করার ফলাফল হাতেনাতে পাচ্ছেন তামিম ইকবাল। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে পাকিস্তানের খেলেন ১০২ রানের ইনিংস। আর বৃহস্পতিবার মূল লড়াইয়ের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেললেন ১২৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ৩০৫ রান করে বাংলাদেশ হারলেও তামিম ছিলেন স্বরূপে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার নবম সেঞ্চুরি। তামিম ইকবাল যদি আরো আগে ধীরস্থির হতেন তাহলে এই সংখ্যাটা আরো বাড়তো তাতে সন্দেহ নেই। তার ক্যারিয়ারের ৯ ওয়ানডে সেঞ্চুরির ৫টিই এসেছে ২০১৫ বিশ্বকাপের পরে। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগের তামিম আর পরের তামিমের মধ্যে অনেক পার্থক্য। ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত তামিম খেলেন ১৪০ ওয়ানডে। ২৯.৬৭ গড়ে করেন মোট ৪১২৫ রান। সেঞ্চুরি ছিল মাত্র চারটি। কিন্তু এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভিন্ন এক তামিম। ২০১৫ সালের এপ্রিলের পর এখন পর্যন্ত তিনি খেলেছেন ২৮ ওয়ানডে। এই সময়ে করেছেন ৫ সেঞ্চুরি। অথচ এই সময়ে বাংলাদেশের বাকি সব ব্যাটসম্যান মিলে করেছেন চার সেঞ্চুরি। এই সময়ে তামিমের ব্যাটিং গড়টাও অবিশ্বাস্য- ৫৮.১২। বিশ্বের যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য এমন ব্যাটিং গড় স্বপ্নের। এই সময়ে ওয়ানডেতে মোট রান করেছেন ১৪৫৩। ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ৮০ রান করেও সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন ৪ বার। কিন্তু এরপর মাত্র একবার ৮০ করে সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তামিম। সেটা ছিল গত বছর সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সেবার তিনি ৮০ রান করে আউট হন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বরাবরই দুর্দান্ত তামিম। দলটির বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে তিনি করেছেন পাঁচ সেঞ্চুরি। তিনটি টেস্টে ও দু’টি ওয়ানডেডে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এর আগে তামিমের সেঞ্চুরি ছিল ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার মাঠে। যে কোনো দলের বিপক্ষে তামিমের এটি সর্বাধিক সেঞ্চুরির ঘটনা। অথচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম ছাড়া বাংলাদেশের অন্য সব খেলোয়াড়ের মিলিত সেঞ্চুরি তিনটি। ইংল্যান্ডের পর তামিমের দ্বিতীয় সর্বাধিক তিনটি করে সেঞ্চুরি রয়েছে পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিমের এবারের সেঞ্চুরিটা ছিল যেন পূর্ব পরিকল্পিত। এদিন তিনি শুরুটা করেন খুবই ধীরে। প্রথম ২০ বলের মোকাবিলায় যোগ করেন মাত্র ৩ রান। এরপর ভাল-মন্দ বল দেখেশুনে দারুণ খেলেন। ৮০ রানকে ১০০ রান করার মানসিকতা এখন তামিমের মধে ঢুকে গেছে। এদিন ৮০ থেকে ১০০- এই ২০ করতে তিনি খেলেন ২৭ বল। মাত্র একটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। ৭১ বলে ফিফটি করার পর তামিম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১২৪ বলে। ১২৮ রান করতে মোকাবিলা করেন ১৪২ বল। ওয়ানডেতে এটি তার সবচেয়ে বেশি বল মোকাবিলার ঘটনা। এর আগে একবার ১৪২ বল মোকাবিলা করেন তিনি। সেটা এ বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডাম্বুলায়। সেখানে তিনি করেন ১২৭ রান। ওয়ানডেতে তামিমের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ১৫৪। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে তিনি এই ইনিংস খেলেন। এই রান করতে তিনি ১৩৮ বল মোকাবিলা করেন।
দুই তামিম
মার্চ, ২০১৫ পর্যন্ত ধরন এপ্রিল, ২০১৫ থেকে
১৪০ ইনিংস ২৮
৪১২৫ রান ১৪৫৩
২৯.৬৭ গড় ৫৮.১২
৪ সেঞ্চুরি ৫